আজ ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সংগৃহীত ছবি

আবারো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনা


অনলাইন ডেস্কঃ চলতি বছর আবারো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনা। এবার চাঁদ দেখা সাপেক্ষে হজ হতে পারে ১৬ জুন। অথচ এখন হাজিদের বাড়ি ভাড়াসহ অনেক আনুষ্ঠানিকতাই বাকি। এ কারণে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অব্যবস্থাপনাকে দুষছেন হজ এজেন্সির মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব)। সংগঠনটির সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেছেন, অব্যবস্থাপনার কারণে আমরা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছি। কোনও হাজি যেন হজে গিয়ে কষ্ট না পান, সে জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) রাতে হজ ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ এবং করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভা করে হাব। রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারস ইনস্টিটিউটে এই আলোচনা সভায় সারা দেশের হজ এজেন্সির প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সভায় হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘হজ ব্যবস্থাপনায় অনেক অনিয়ম, দুর্নীতি ছিল। আমরা অন্যায় করবো না, করতে দেবো না এই শ্লোগানে কাজ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে হাবের অবস্থান নেই। ধর্ম মন্ত্রণালয়ে কোনও কর্মকর্তা স্থায়ী না, তারা দুই-তিন বছর পরপর বদলি হন, হজের আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে তাদের স্বচ্ছ ধারণা নেই। তাদের কারণে হজ ব্যবস্থাপনা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হোক তা আমরা চাই না।’

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা হজ ব্যবস্থাপনায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এজেন্সি মালিকদের সঙ্গে পরামর্শ করেন না বলেও অভিযোগ হাবের। এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘হজ ব্যবস্থাপনা আবার চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। আমরা আগেই ধর্ম মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিলাম, হজ ব্যবস্থাপনা এ বছর চ্যালেঞ্জিং হবে। এজেন্সি কোটা সর্বনিম্ন ১০০ জন রাখতে আমরা অনুরোধ করেছিলাম। ধর্ম মন্ত্রণালয় হজযাত্রীর সংখ্যা কমাতে অনাগ্রহী হয়। সর্বোচ্চ এজেন্সি কোটা ৩০০ থাকা স্বত্বেও কি কারণে ৫০০ জন করা হলো তা বোধগম্য নয়। ধর্মমন্ত্রী এজেন্সি প্রতি ৪০০ জন কোটা রাখার নির্দেশনা দেওয়া স্বত্বেও ধর্ম সচিব ৫০০ জন কোটা নির্ধারণ করলেন। কেন করলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।’

হাব সভাপতি বলেন, ‘সৌদি সরকার ৫৬ এজেন্সির মাধ্যমে হজ কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তাব দিলেও আমরা তার বিরোধিতা করেছিলাম। কারণ এজেন্সিতে যাত্রীসংখ্যা বেশি হলে সব যাত্রীকে সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বৃদ্ধ হাজিদের জন্য সঠিকভাবে সেবা প্রাপ্তিতে বিঘ্ন ঘটে। কিন্তু এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিবের ভূমিকা যথার্থ ছিল না।’

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কারণে এখনও সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়ার জন্য এজেন্সির প্রতিনিধিদের সৌদিতে যেতে হয়। প্রতি বছর প্রতিনিধিদের সৌদি যেতে মাল্টিপল ভিজিট ভিসা দেওয়া হয়ে থাকে। পরিচালক হজ অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী এজেন্সিগুলো পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে ভিজিট ভিসার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয় এখনও হজ এজেন্সির প্রতিনিধিদের ভিজিট ভিসার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ। তারা সৌদি আরবে না গেলে বাড়ি ভাড়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। এজেন্সির প্রতিনিধি ছাড়া বাড়ি ভাড়া করা যাবে না এবং বাড়ি ভাড়া করা না গেলে হজ ভিসা করা যাবে না।’

আরও পড়ুন অনুমতি ছাড়া হজ করলে জেল–জরিমানা

তিনি আরও বলেন, ‘সৌদি আরবে বাংলাদেশ হজ মিশন আছে। জেদ্দা কনসাল জেনারেল (হজ) আছেন, তারা চাইলেই সৌদি আরবে সরকারি নিবন্ধিত হাজিদের বাড়ি ভাড়া করতে পারেন। তারপরও ধর্ম সচিবের নেতৃত্বে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে লোকবল নিয়ে দীর্ঘদিন সৌদি আরবে অবস্থান সরকারিভাবে বাড়ি ভাড়া করা হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি এজেন্সির বাড়ি ভাড়া জন্য সৌদি যেতে ভিসার ব্যবস্থা করতে ধর্ম মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হয়েছে। বাড়ি ভাড়ার জন্য এজেন্সি প্রতিনিধিরা সৌদি যেতে না পারলে বিশাল সংখ্যক হজযাত্রীর বাড়ি ভাড়া কীভাবে সম্ভব?’

সংগৃহীত ছবি

শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘হজযাত্রীদের মীনায় অবস্থানের লোকেশন এবং সার্ভিস প্রোভাইডার এখনও নির্ধারণ হয়নি। ফাইনাল ফ্লাইট সিডিউল আজ পর্যন্ত প্রকাশ না হওয়ার কারণে এজেন্সি বাড়ি ভাড়া বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।’

তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর দেশ থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের সৌদি নেওয়া হয় হজে সহায়তাকারী হিসেবে। এতে দেশের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। এ প্রেক্ষাপটে সিদ্ধান্ত হয়েছিল এ বছর বাংলাদেশ থেকে কোনও সহায়তাকারী নেওয়া হবে না। সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দায়িত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু কোনও এক অজানা কারণে বাংলাদেশ থেকে হজ সহায়তাকারী নেওয়া হচ্ছে।’

হাব সভাপতি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা কখনও বেসরকারি হজ যাত্রীদের খোঁজ-খবরও নেন না। সরকারি চার-পাঁচ হাজার হাজির জন্য এই বিশাল সংখ্যক জনবল দেশ থেকে নেওয়া দেশের অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। সব চেয়ে বেশি হাজি যায় হজ এজেন্সির মাধ্যমে, তাদের জন্য সহায়তাকারী বেশি প্রয়োজন। তাই সহায়তাকারী হিসেবে হজ এজেন্সিকে ভিসা সুবিধা নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে হজ ব্যবস্থাপনা চ্যালেঞ্জের মুখে। ধর্ম মন্ত্রণালয়কে হাব এ বিষয়ে আগেই সতর্ক করেছিল। কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয় তা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। হজযাত্রীদের কল্যাণে সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করতে হবে।’

সভায় আরও ছিলেন– হাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী, সহ-সভাপতি মাওলানা ফজলুর রহমান, মহাসচিব ফারুক আহমদ সরদার, মহাসচিব ফারুক আহমদ সরদার, জনসংযোগ সচিব মুফতি মুহাম্মদ জুনায়েদ গুলজার প্রমুখ।

তথ্যসূত্র: বাংলাট্রিবিউন


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর